তীর্থস্থান
এ অধ্যায়ে যা আছে-
বেলি চাকমা, অনিন্দ্য বড়ুয়া, মিনুচিং মারমা, মারি খীসা এবং পূর্ণ তংচঙ্গ্যা একই স্কুলে পড়ে। একদিন বেলি চাকমা স্কুলে অনেকগুলো ছবি নিয়ে আসে। ছবিগুলো তার ঠাকুরমার তীর্থস্থান দর্শনের ছবি। সবাই গোল হয়ে বসে ছবিগুলো দেখছে। অনিন্দ্য বড়ুয়া একটি ছবি একেবারে মগ্ন হয়ে দেখছে। মিনুচিং ও মারি বিষয়টি লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করল, অনিন্দ্য! তুমি মনোযোগ দিয়ে কি দেখছ? সে বলল, 'তোমাদের মনে আছে আমরা বইতে বুদ্ধগয়ার কথা পড়েছি। যেখানে বুদ্ধ বোধিজ্ঞান লাভ করেছিলেন। দেখো বেলির ঠাকুরমা সেই বুদ্ধগয়া গিয়েছেন।' সবাই আগ্রহ সহকারে ছবিগুলো দেখতে লাগলো। পূর্ণ বলল, 'বুদ্ধ যেসব স্থানে বসবাস এবং ধর্মদেশনা করেছেন ঠাকুরমা সেসব স্থান পরিদর্শন করেছেন।' তারা বেলির ঠাকুরমার তীর্থস্থান দর্শনের ছবিগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখছিল। এমন সময় শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে এলেন। শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষক বললেন, 'তোমরা কী দেখছ? সবাই একত্রে বলে উঠল তীর্থস্থানের ছবি দেখছি।' তখন শিক্ষক বললেন, আজ আমরা তীর্থস্থান সম্পর্কে জানব। চলো তার আগে আমরা যেসব তীর্থস্থানের নাম জানি তাঁর একটি তালিকা তৈরি করি:
অংশগ্রহণমূলক কাজ-৪২: দলগত কাজ
তালিকা তৈরি: দলে আলোচনা করে বৌদ্ধ তীর্থস্থানের তালিকা তৈরি করি
তীর্থস্থান
আমরা অনেক তীর্থস্থানের নাম জানি। এখন আমরা জানব তীর্থস্থান কাকে বলে। সাধারণত ধর্ম প্রবর্তকের স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহকে তীর্থস্থান বলে। প্রত্যেক ধর্মের তীর্থস্থান রয়েছে। সকল ধর্মের মানুষের কাছে তীর্থস্থান অত্যন্ত প্রিয়। সকল মানুষ তীর্থস্থান দর্শন পুণ্যের কাজ মনে করেন। বৌদ্ধরাও শ্রদ্ধাচিত্তে তীর্থস্থান দর্শন করেন। বুদ্ধ, বুদ্ধশিষ্য এবং বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক রাজন্যবর্গের জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বিভিন্ন স্থানে সংঘঠিত হয়েছে। স্মৃতিবহ সেসব স্থান স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে স্থানসমূহে বিহার, চৈত্য, স্তূপ, স্তম্ভ, স্মারক চিহ্ন প্রভৃতি নির্মিত হয়েছে। বুদ্ধ, বুদ্ধশিষ্য ও রাজন্যবর্গের স্মৃতি বিজড়িত সেসব স্থানকে বৌদ্ধ তীর্থস্থান বলা হয়। বিভিন্ন দেশে বৌদ্ধ তীর্থস্থান রয়েছে। তবে অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ তীর্থস্থান ভারতে অবস্থিত। প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে বৌদ্ধরা পুণ্য অর্জনের জন্য তীর্থস্থান দর্শনে ভারতে গমন করেন।
অংশগ্রহণমূলক কাজ-৪৩: একক কাজ
ছবি আঁকি: নিচের ঘরে পাঠ্যবই থেকে যেকোনো একটি তীর্থ অথবা মহাতীর্থ স্থানের ছবি আঁকি
গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ তীর্থস্থান
বৌদ্ধদের অনেক তীর্থস্থান রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: লুম্বিনী, বুদ্ধগয়া, সারনাথ, কুশিনগর, কপিলাবস্তু, শ্রাবন্তী, রাজগৃহ, বৈশালী। বুদ্ধ লুম্বিনীতে জন্মগ্রহণ করেন। বুদ্ধগয়ায় বোধিজ্ঞান লাভ করেন। সারনাথে প্রথম ধর্মপ্রচার করেন। কুশিনগরে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। বুদ্ধের জীবনের এই চারটি প্রধান ঘটনা চারটি স্থানে সংঘটিত হয়। এই স্থানসমূহ বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে চারি মহাতীর্থস্থান নামে পরিচিত। কপিলাবস্তু, রাজগৃহ, শ্রাবন্তী, বৈশালী প্রভৃতি স্থানে বুদ্ধ, বুদ্ধশিষ্য ও বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক রাজা ও শ্রেষ্ঠিগণের অনেক স্মৃতি রয়েছে। স্থানসমূহে বহু দর্শনীয় নিদর্শন রয়েছে। বৌদ্ধরা স্থানসমূহ শ্রদ্ধ্যসহকারে পরিদর্শন করেন। স্থানসমূহে পূজা ও প্রার্থনা নিবেদন করেন। এখন আমরা কপিলাবস্তু, রাজগৃহ, শ্রাবন্তী, বৈশালী সম্পর্কে জানব।
অংশগ্রহণমূলক কাজ-৪৪: একক কাজ
প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা: নিচের স্থানসমূহ সঠিক স্থানে লিখি
স্থানসমূহ
লুম্বিনী, কপিলাবস্তু, সারনাথ, শ্রাবন্তী, রাজগৃহ, বুদ্ধগয়া, বৈশালী, কুশিনগর
তীর্থস্থান | মহাতীর্থস্থান |
১. ২. ৩. ৪. ৫. | ১. ২. ৩. ৪. ৫. |
অংশগ্রহণমূলক কাজ-৪৫: একক কাজ
মিলকরণ: বাম পাশের বাক্যের সাথে ডান পাশের বাক্যের মিল করি
ক. বুদ্ধ লুম্বিনীতে |
খ. বুদ্ধগয়ায় বুদ্ধ |
গ. সারনাথে বুদ্ধ প্রথম |
ঘ. কুশিনগরে বুদ্ধ |
ঙ. বৌদ্ধরা তীর্থস্থানসমূহ |
ক. বোধিজ্ঞান লাভ করেন। |
খ. মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। |
গ. ধর্মপ্রচার করেন। |
ঘ. জন্মগ্রহণ করেন। |
ঙ. শ্রদ্ধাসহকারে পরিদর্শন করেন। |
কপিলাবস্তু
কপিলাবস্তু বৌদ্ধদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থানও। এ স্থানের অনেক গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। হিমালয়ের পাদদেশে তরাই অঞ্চলে কপিলাবস্তু অবস্থিত। বুদ্ধের সময়ে কপিলাবস্তু একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। শাক্যগণ এই রাজ্যে বসবাস করতেন। সিদ্ধার্থ গৌতমের পিতা রাজা শুদ্ধোদন এই রাজ্যে রাজত্ব করতেন। এ রাজ্যের অনতিদূরে লুম্বিনী নামক এক মনোরম উদ্যান ছিল। সিদ্ধার্থ গৌতম লুম্বিনী উদ্যানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বুদ্ধত্ব লাভের পূর্বে সিদ্ধার্থ গৌতম এ রাজ্যে ২৯ বছর অতিবাহিত করেন। এ রাজ্যে তাঁর জীবনের অনেক স্মৃতি রয়েছে।
বর্তমানে ভারতের গোরক্ষপুর রেলস্টেশন থেকে ১১০ কিলোমিটার এবং সীমান্তবর্তী স্টেশন নওগড় থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে কপিলাবস্তু অবস্থিত। কপিলাবস্তুর দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: প্রাচীন শাক্য রাজধানী তিলৌরাকোটের ধ্বংসস্তূপ, সইমার মন্দির বা রানি মায়াদেবীর মন্দির, সগরহবা বা শাক্যদের বধ্যভূমি বা শশ্মশান এবং অশোকস্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ। বর্তমানে এখানে একটি বৌদ্ধ বিহার আছে, যা 'মঙ্গল বিহার' নামে পরিচিত।
অংশগ্রহণমূলক কাজ-৪৬: একক কাজ
শূন্যস্থান পূরণ: সঠিক শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করি
ক) কপিলাবস্তু বৌদ্ধদের একটি পবিত্র . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
খ) হিমালয়ের পাদদেশে. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .কপিলাবস্তু অবস্থিত।
গ) বুদ্ধের সময়ে কপিলাবস্তু একটি. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . রাজ্য ছিল।
ঘ) সিদ্ধার্থ গৌতমের পিতা রাজা শুদ্ধোদন এই রাজ্যে . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .করতেন।
ঙ) বর্তমানে এখানে একটি বৌদ্ধ বিহার আছে, যা '. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .' নামে পরিচিত।
রাজগৃহ
রাজগৃহ বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। বুদ্ধগয়া থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে রাজগৃহ অবস্থিত। যা বর্তমানে রাজগীর নামে পরিচিত। বৈভার, বৈপুল্য, রত্নগিরি, উদয়গিরি, শোনগিরি- এ পাঁচটি পাহাড় দ্বারা রাজগৃহ ঘেরা। রাজগৃহ মগধরাজ বিম্বিসারের রাজধানী ছিল। রাজা বিম্বিসার রাজগৃহে 'বেনুবন বিহার' নির্মাণ করে বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘকে দান করেন। বুদ্ধ দীর্ঘদিন রাজগৃহে অবস্থান করে অসংখ্য ধর্মোপদেশ দান করেছেন। এখানে সারিপুত্র ও মৌদগল্যায়ন বুদ্ধের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। রাজ পরিবারের চিকিৎসক জীবক বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘের চিকিৎসা করতেন। তিনি রাজগৃহের আম্রবনে ভিক্ষুসংঘের জন্য এক বিহার নির্মাণ করেন, যা 'জীবকাস্রবন' (জীবকের আম বাগান) নামে পরিচিত। রাজগৃহের সপ্তপর্ণী গুহায় প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতি বা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে এখানে একটি অপূর্ব বিশ্বশান্তি স্তূপ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
অনুশীলনীমূলক কাজ-৪৭: একক কাজ
মিলকরণ: বামপাশের বাক্যের সাথে ডান পাশের বাক্যের মিল করি
ক. রাজগৃহ বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত | ক. রাজগৃহ অবস্থিত। |
খ. বুদ্ধগয়া থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে | খ. 'বেনুবন বিহার' নির্মাণ করেন। |
গ. রাজা বিম্বিসার রাজগৃহে | গ. একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। |
ঘ. চিকিৎসক জীবক | ঘ. প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতি বা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। |
ঙ. রাজগৃহের সপ্তপর্ণী গুহায় | ৪. বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘের চিকিৎসা করতেন। |
শ্রাবস্তী
চিত্র-২২: প্রাচীন শ্রাবন্তী নগরের ধ্বংসস্তূপ
শ্রাবন্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ তীর্থস্থান। এ স্থানে বুদ্ধের জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িত আছে। শ্রাবন্তী ছিল কোশলরাজ প্রসেনজিতের রাজধানী। শ্রাবন্তীর বর্তমান নাম সাহেত-মাহেত। এ স্থানে বর্তমানে প্রাচীন শ্রাবন্তী নগরীর ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। ভারতের উত্তর প্রদেশের গোণ্ডা জেলার বলরামপুর রেলস্টেশনের নিকটে স্থানটি অবস্থিত। এখানে অনাথপিণ্ডিক নির্মিত প্রসিদ্ধ জেতবন বিহার অবস্থিত ছিল। এই বিহারে বুদ্ধ ১৯টি বর্ষাবাস পালন করেন। দস্যু অঙ্গুলিমাল এ বিহারে বুদ্ধের কাছে দীক্ষিত হন। কোশলরাজ প্রসেনজিৎ এ বিহারে বুদ্ধের নিকট ত্রিরত্নের শরণ গ্রহণ করেন। তিনি বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তিনি ভিক্ষুণীসংঘের জন্য রাজাকারাম বিহার নির্মাণ করেন। মহাউপাসিকা বিশাখা শ্রাবন্তীতে পূর্বারাম বিহার নির্মাণ করে বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘকে দান করেন। রাজা প্রসেনজিতের স্ত্রী রানি মল্লিকাদেবী ভিক্ষুণীদের জন্য এখানে মল্লিকারাম বিহার নামে এক সুন্দর বিহার নির্মাণ করেন। সম্রাট অশোক শ্রাবন্তীতে ধর্মযাত্রায় এসে সারিপুত্র, মৌদগল্যায়ন, মহাকশ্যপ ও আনন্দ থেরর স্মৃতিস্তূপ নির্মাণ করেন। বিভিন্ন দেশ থেকে বৌদ্ধরা পুণ্য অর্জনের জন্য শ্রাবন্তী দর্শনে আসেন এবং বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
অনুশীলনীমূলক কাজ-৪৮: একক কাজ
শুদ্ধ-অশুদ্ধ নির্ণয়: ডানে খালিস্থানে শুদ্ধ/অশুদ্ধ লিখি
ক. জেতবন বিহার অনাথপিণ্ডিক নির্মাণ করেন। . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
খ. বুদ্ধ শ্রাবন্তীর জেতবনে ১৫টি বর্ষাবাস পালন করেন। . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
গ. পূর্বারাম বিহার মহাউপাসিকা বিশাখা নির্মাণ করেন।--- . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
ঘ. মল্লিকারাম বিহার রাজা প্রসেনজিত নির্মাণ করেন। . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
বৈশালী
বৈশালী একটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ তীর্থস্থান। বর্তমানে স্থানটি 'বেসার' নামে পরিচিত। ভারতের বিহার রাজ্যের মোজাফ্ফরপুর জেলায় স্থানটি অবস্থিত। বুদ্ধের সময়ে বৈশালী একটি সমৃদ্ধ নগরী এবং বৃজি ও লিচ্ছবী জাতির রাজধানী ছিল। এ স্থানে বুদ্ধের জীবনের অনেক স্মৃতি রয়েছে। এখানে ঋষি আড়ার কালামের আশ্রম ছিল। সংসার ত্যাগ করে বুদ্ধ প্রথমে এই ঋষির আশ্রমে সাধনা করেছিলেন।
বুদ্ধের সময়ে বৈশালীতে একবার দুর্ভিক্ষ ও মহামারি দেখা দিয়েছিল। এ সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের জন্য বৈশালীবাসী বুদ্ধকে আমন্ত্রণ করেন। বুদ্ধ শিষ্যসহ বৈশালীতে আসেন। বুদ্ধের উপদেশে আনন্দ থের রতন সূত্র আবৃত্তি করেন এবং বুদ্ধের ভিক্ষাপাত্র হতে বৈশালী নগরের চারিদিকে পানি সিঞ্চন করেন। ফলে বৈশালীবাসী দুর্ভিক্ষ ও মহামারি থেকে রক্ষা পায়। বৈশালীবাসী কূটাগারশালা বিহার নির্মাণপূর্বক বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘকে দান করেন। মহাপ্রজাপতি গৌতমী এবং শিষ্য আনন্দের অনুরোধে বুদ্ধ বৈশালীতে প্রথম ভিক্ষুণীসংঘ গঠনের অনুমতি দেন। নর্তকী আম্রপালি বুদ্ধকে বৈশালীর আম্রকাননে নিমন্ত্রণ করেন। বুদ্ধের ধর্মোপদেশ শুনে তিনি ভিক্ষুণীসংঘে যোগদান করেন। বুদ্ধ শেষ বর্ষাবাস বৈশালীতে যাপন করেন। তিনি বৈশালীর চাপাল চৈত্যে মাঘী পূর্ণিমার দিনে মহাপরিনির্বাণের কথা ঘোষণা করেন। মহাপরিনির্বাণের পর বুদ্ধের পুতাস্থি নিয়ে বৈশালীবাসী এখানে একটি স্তূপ নির্মাণ করেন। বৈশালীতে বুদ্ধ অনেক ধর্মোপদেশ দান করেছেন, যা ত্রিপিটকে লিপিবদ্ধ আছে। বর্তমানে এখানে বৈশালী জাদুঘর ও বিশ্বশান্তি প্যাগোডা রয়েছে।
অংশগ্রহণমূলক কাজ-৪৯: একক কাজ
কুইজ: টিক (✔) চিহ্ন দিয়ে সঠিক উত্তর বাছাই করি
ক) বৈশালী পরিচিত ছিল: বেসার/সেনানী/সাহেত-মাহেত নামে।
খ) ঋষি আড়ার কালামের আশ্রম ছিল: শ্রাবন্তী/কপিলাবস্তু/বৈশালী।
গ) বৈশালীবাসী বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘের জন্য নির্মাণ করেন: বেনুবন বিহার/কূটাগারশালা বিহার/ জেতবন বিহার।
ঘ) শিষ্য আনন্দ থের আবৃত্তি করেন: মঙ্গল সূত্র/রতন সূত্র/নিধিকুণ্ড সূত্র।
ঙ) ভিক্ষুণীসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়: শ্রাবন্তীতে/রাজগৃহে/বৈশালীতে।
অংশগ্রহণমূলক কাজ-৫০: দলগত কাজ
তালিকা তৈরি: কপিলাবস্তু, রাজগৃহ, শ্রাবন্তী ও বৈশালীতে যেসব দর্শনীয় স্থান ও বস্তু আছে তার তালিকা তৈরি করি
কপিলাবস্তু | শ্রাবস্তী | রাজগৃহ | বৈশালী |
১. ২. ৩. | ১. ২. ৩. | ১. ২. ৩.। | .১. ২. ৩. |
তীর্থস্থান দর্শনের সুফল
বৌদ্ধদের অনেক তীর্থস্থান রয়েছে। বৌদ্ধরা পুণ্য অর্জনের জন্য শ্রদ্ধাসহকারে তীর্থস্থান দর্শন করেন। তীর্থস্থান দর্শনের সুফল অনেক। নিচে তীর্থস্থান দর্শনের সুফল তুলে ধরা হলো
১) তীর্থস্থান ভ্রমণ ও দর্শন করলে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা উৎপন্ন হয়।
২) মন উদার ও পবিত্র হয়।
৩) পুণ্যরাশি সঞ্চিত হয়।
৪) সৎ জীবন-যাপনে উদ্বুদ্ধ হয়।
৫) ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও উৎসবে যোগদানে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। শক্ষাবর্ষ ২০২৪
৬) দেশ ও ধর্মের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।
অংশগ্রহণমূলক কাজ-৫১: দলগত কাজ
অনুচ্ছেদ লিখন: দলে আলোচনা করে নিজেদের দেখা একটি তীর্থস্থান বা একটি প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ বিহার দেখার অনুভূতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদ লিখি
বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান/পবিত্রস্থান
বৌদ্ধদের যেমন তীর্থস্থান আছে, তেমনি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও তীর্থস্থান/পবিত্রস্থান রয়েছে। এখন আমরা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান/পবিত্রস্থান সম্পর্কে জানব। মুসলিমদের অনেক পবিত্র স্থান রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: মক্কা শরীফ ও মদিনা শরীফ। হিন্দুদের বহু তীর্থস্থান রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: গয়া, কাশি, বৃন্দাবন, কেদারনাথ, লাঙ্গলবন্দ, চন্দ্রনাথ। খ্রীষ্টানদেরও অনেক তীর্থস্থান রয়েছে। তাঁদের উল্লেখযোগ্য তীর্থস্থান হলো: লুর্দ, জেরুজালেম, রোম নগরী, বেথেলহেম। বৌদ্ধদের কাছে যেমন তাঁদের তীর্থস্থান প্রিয়, ঠিক তেমনি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিকটও তাঁদের তীর্থস্থান বা পবিত্রস্থান প্রিয়। তাই আমাদের অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বা পবিত্রস্থানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নশীল হওয়া উচিত।
অংশগ্রহণমূলক কাজ-৫২: দলগত কাজ
প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা: দলে আলোচনা করে নিচের তীর্থস্থান/পবিত্রস্থানসমূহ সঠিক স্থানে লিখি
স্থানসমূহ: রাজগৃহ, গয়া, বুদ্ধগয়া, মদিনা শরীফ, লুম্বিনী, কাশি, লুর্দ, কপিলাবস্তু, বৃন্দাবন, সারনাথ, মক্কা শরীফ, বেথেলহেম। কেদারনাথ, জেরুজালেম, শ্রাবন্তী, লাঙ্গলবন্দ, চন্দ্রনাথ, বৈশালী, রোম নগরী, কুশিনগর।
বৌদ্ধ | মুসলিম | হিন্দু | খ্রীষ্টান |
১. | |||
২. | |||
৩. | |||
. | |||
. | |||
. | |||
. |
আরও দেখুন...